১৯৮৬ সালের জাতীয় শিক্ষানীতির
সঙ্গে ১৯৯২ সালের সংশোধিত জাতীয় শিক্ষানীতির তুলনামূলক আলোচনা কর।
১৯৮৬ খ্রীষ্টাব্দে তৎকালীন
ভারতের প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধি কর্তৃক যে জাতীয় শিক্ষানীতি ঘোষিত হয়েছিল তা
১৯৯২ খ্রীষ্টাব্দে সংশোধিত হয়েছিল। নিচে ১৯৮৬ সালের জাতীয় শিক্ষানীতির সঙ্গে ১৯৯২
সালের সংশোধিত জাতীয় শিক্ষানীতির তুলনামূলক আলোচনা করা হল
।
।
১) শিক্ষার রূপ—
১৯৮৬ সালের জাতীয় শিক্ষানীতিতে
প্রথাগত শিক্ষার উপর সবথেকে বেশী জোর দেওয়া হয়েছিল। ১৯৯২ সালের সংশোধিত জাতীয়
শিক্ষানীতিতে প্রথাগত শিক্ষার পাশাপাশি প্রথা-বহির্ভূত শিক্ষার উপর জোর দেওয়া
হয়েছিল।
২) জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থা—
১৯৮৬ সালের জাতীয় শিক্ষানীতিতে
সমগ্র ভারতে একই ধরণের শিক্ষা কাঠামো, পাঠ্যক্রম, নিয়মকানুন মেনে চলার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু, ১৯৯২ সালের সংশোধিত জাতীয় শিক্ষানীতিতে
সারাদেশে শিক্ষার ক্ষেত্রে যাতে অভিন্ন পাঠ্যক্রম, পদ্ধতি, নিয়মকানুন
চালু করতে সুপারিশ করেছেন।
৩) শিক্ষায় সমতা—
১৯৮৬ সালের জাতীয় শিক্ষানীতিতে
শিক্ষাক্ষেত্রে সকল শিক্ষার্থীদের সমান সুযোগ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। শিক্ষা
প্রতিষ্ঠানে ভর্তির ক্ষেত্রে মেধার উপর গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। অপরদিকে, ১৯৯২ সালের সংশোধিত জাতীয় শিক্ষানীতিতে
মেধাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের বেশী বেশী সুযোগ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
৪) বয়স্ক শিক্ষার প্রসার—
১৯৮৬ সালের জাতীয় শিক্ষানীতিতে
বয়স্ক শিক্ষার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু, ১৯৯২
সালের সংশোধিত জাতীয় শিক্ষানীতিতে বয়স্ক শিক্ষার উপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলা
হয়েছে। পাশাপাশি বলা হয়েছে করেসপণ্ডেন্স কোর্স ও মুক্ত শিক্ষার মাধ্যমে বয়স্ক
শিক্ষার প্রসার ঘটাতে হবে।
৫) প্রাথমিক শিক্ষার প্রসার—
১৯৮৬ সালের জাতীয় শিক্ষানীতিতে
প্রাথমিক শিক্ষার উপর গুরুত্ব দিয়ে প্রতিটি বিদ্যালয়ে ২ টি ঘর, ২ জন শিক্ষকের (১ জন মহিলা) কথা বলা হয়েছিল।
কিন্তু, ১৯৯২ সালের সংশোধিত
জাতীয় শিক্ষানীতিতে প্রাথমিক শিক্ষার উপর আরও বেশী গুরুত্ব দিয়ে প্রতিটি বিদ্যালয়ে
৩ টি ঘর, ৩ জন শিক্ষক, বিনামূল্যে বইখাতা, পোশাক, দুপুরের খাবার ইত্যাদি দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
৬) মাধ্যমিক শিক্ষা—
১৯৮৬ সালের জাতীয় শিক্ষানীতিতে
মাধ্যমিক শিক্ষার উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে এবং পাঠ্যক্রমকে বৃত্তিমূলক করার কথা
বলা হয়েছে। ১৯৯২ সালের সংশোধিত জাতীয় শিক্ষানীতিতে স্বল্প মেধাবী শিক্ষার্থীদের
জন্য বৃত্তি শিক্ষার উপর জোর দেওয়া হয়েছে।
৭) চাকরি থেকে ডিগ্রিকে
বিচ্ছিন্ন করা—
১৯৮৬ সালের জাতীয় শিক্ষানীতিতে
চাকরি থেকে ডিগ্রিকে বিচ্ছিন্ন করার কথা বলা হয়েছে। অপর দিকে ১৯৯২ সালের সংশোধিত
জাতীয় শিক্ষানীতিতে বলা হয়েছে চাকরি থেকে ডিগ্রিকে আলাদা করার জন্য পাঠ্যক্রম
সংশোধন করতে হবে।
৮) পরীক্ষা ব্যবস্থা ও মূল্যায়ন
পদ্ধতি—
১৯৮৬ সালের জাতীয় শিক্ষানীতির
একটি বড় ঘাটতি অমনোবৈজ্ঞানিক পরীক্ষা পদ্ধতি। ১৯৯২ সালের সংশোধিত জাতীয়
শিক্ষানীতিতে পরীক্ষা পদ্ধতিকে ছোট ছোট অংশে বিভক্ত করে মনোবিজ্ঞানসম্মত
মূল্যায়নের সুযোগ তৈরি করার কথা বলা হয়েছে।
৯) শিক্ষকদের মর্যাদা বৃদ্ধি—
১৯৮৬ সালের জাতীয় শিক্ষানীতিতে
শিক্ষকদের মান উন্নয়ন ও মর্যাদা বৃদ্ধির উপর জোর দেওয়া হয়েছিল। অপরদিকে, ১৯৯২ সালের সংশোধিত জাতীয় শিক্ষানীতিতে
শিক্ষকদের মান উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন প্রকার সুযোগসুবিধা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
সুতরাং, ১৯৯২ সালের সংশোধিত জাতীয় শিক্ষানীতি, ১৯৮৬ সালের জাতীয় শিক্ষানীতির অসম্পূর্ণতাকে
দূর করে তাকে আরও বাস্তবমুখী ও কার্যকরী করে তুলতে সাহায্য করেছিল।